Connecting local responses around the world
Website: the-constellation.org
Newsletter English, French Spanish
Facebook https://www.facebook.com/pages/The-Constellation/457271687691239
Twitter @TheConstellati1
Instagram: https://www.instagram.com/constellationclcp/
জীবনে আমি বহুবার মেলায় গিয়েছি। আবার কয়েকবার মেলার আয়োজনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম। স্কুলজীবনে প্রতি বছরই পিঠা মেলা, বিজ্ঞান মেলা, বই মেলা কিংবা বৈশাখী মেলার আয়োজন করতাম। রঙিন সাজ, আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর মানুষের ভিড়ে সেই মেলাগুলো ছিল প্রাণে ভরা। মেলা মানেই ঘুরে ঘুরে দেখা, কিছু কেনা, হাসি–আনন্দ—সব মিলিয়ে এক ধরনের উৎসব।
কিন্তু ‘নলেজ ফেয়ার’ বা ‘জ্ঞান মেলা’—এই ধারণাটির সঙ্গে আমার আগে কখনো সরাসরি পরিচয় হয়নি। BRED-এ যোগ দেওয়ার পর থেকেই বারবার সবার মুখে “নলেজ ফেয়ার” শব্দটি শুনতাম। মনে কৌতূহল জন্মাত—এই মেলায় আসলে কী হয়?
ধীরে ধীরে জানতে পারি, নলেজ ফেয়ার এমন একটি আয়োজন যেখানে কমিউনিটির মানুষ নিজেরাই তাদের কাজ, উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও সফলতার গল্প একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেন। বিভিন্ন কোহর্ট পার্টনাররা অংশ নেন, নিজেদের কমিউনিটির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তবে সবচেয়ে ভালো লাগে তখনই, যখন সরাসরি কমিউনিটির মানুষ নিজেরাই সামনে এসে তাদের পরিবর্তনের গল্প শোনান। তখনই বুঝি—এই নলেজ ফেয়ার সত্যিই একেবারে আলাদা, একেবারে ভিন্ন।
BRED আয়োজিত আমাদের এই নলেজ ফেয়ারটি ছিল পুরোপুরি কমিউনিটি লেড। কীভাবে মেলা হবে, কোন দল কীভাবে তাদের কাজ তুলে ধরবে—এসব সিদ্ধান্ত কমিউনিটির মানুষ নিজেরাই আলোচনা করে নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ২০২৫ সালের ২৫ অক্টোবর নলেজ ফেয়ারের দিন নির্ধারিত হয়। ভেন্যু হিসেবে ঠিক করা হয় নাকালিয়া মঞ্জুর কাদের ডিগ্রি কলেজের অডিটোরিয়াম।
২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় আমরা BRED টিম ও কমিউনিটির সদস্যরা মিলে অডিটোরিয়াম সাজাই। ২৫ তারিখ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে আমরা BRED অফিস থেকে অডিটোরিয়ামে পৌঁছাই। সেখানে গিয়ে দেখি, একে একে কমিউনিটির মানুষজন আসতে শুরু করেছেন। এরপর আমাদের বাংলাদেশ কোহর্ট পার্টনার গ্রো ইওর রিডার ফাউন্ডেশন ও আলোকিত করি টিমের খোঁজ নেওয়া হয়।
রেজিস্ট্রেশন বুথে দায়িত্ব নেন খাদিজা আপা ও হাসিনা আপা। সবাই রেজিস্ট্রেশন করে ইভেন্ট কার্ড সংগ্রহ করেন। লাল-সবুজ মাদুর পেতে আমরা একসঙ্গে বসি। মুরব্বি ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা চেয়ারের ব্যবস্থাও ছিল—যা আয়োজনটিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলে।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে কমিউনিটির ‘চলো এগিয়ে যাই’ টিমের কাওসারের কোরআন তেলাওয়াত ও রজনীগন্ধা টিমের দৃষ্টি শিল্পীর গীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে নলেজ ফেয়ারের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশিকুর রহমান খান (প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, BRED) ও হুমায়রা ইয়াসমিন পিয়া (ডেপুটি ডিরেক্টর, BRED)। BRED-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহিদুল ইসলাম শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এবং BRED-এর পরিচিতি তুলে ধরেন আশিকুর রহমান খান।
এরপর শুরু হয় নলেজ ফেয়ারের মূল আয়োজন। কমিউনিটির ১১টি দল একে একে তাদের উদ্যোগ, সফলতা ও পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরেন। Grow Your Reader Foundation-এর পক্ষ থেকে আফসানা আপু তাদের কমিউনিটির অভিজ্ঞতা পেঁচাকোলা কমিউনিটির সঙ্গে ভাগ করে নেন। ‘আগামীর স্কুল’-এর সেলিম ভাই বলেন, ইচ্ছা আর আগ্রহ থাকলে সীমিত সম্পদ দিয়েও বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব—তার গল্প সবাইকে অনুপ্রাণিত করে।
‘আলোকিত করি’ টিম থেকে পারভেজ ভাই, ঝুমুর দিদি ও নিশাত আপু তাঁদের SALT কার্যক্রমের গল্প শেয়ার করেন। কীভাবে ভাসমান মানুষের শিশুদের পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হয়েছে—সেই গল্প উপস্থিত সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। Grow Your Reader-এর পক্ষ থেকে সাদমান ভাই একটি মজার গেম আয়োজন করেন, পরে প্রিয়া আপুও নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
কমিউনিটি লিডার ইঞ্জিনিয়ার কামাল পাশা তরুণদের উদ্দেশে বলেন, আরও সাহসী ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান—যাতে একদিন পেঁচাকোলা কমিউনিটিও সবার সামনে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরা যায়।
একসময় পেঁচাকোলা ছিল বেশ রক্ষণশীল একটি কমিউনিটি। নারীরা প্রকাশ্যে কথা বলার সুযোগও পেতেন না। আজ SALT-এর মাধ্যমে সেই চিন্তাধারার পরিবর্তন হচ্ছে। নারীরা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, পাবলিক স্পিকিং করছেন, জাতীয় ক্যাম্পেইন ও ওয়ার্কশপে অংশ নিচ্ছেন। কমিউনিটিতে ‘হেলদি ম্যাসকুলিনিটি’র চর্চা শুরু হয়েছে। অনেক পুরুষ এখন বুঝতে পারছেন—গৃহিণীদের কাজের কোনো ছুটি নেই; তাই তারা দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছেন।
শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী দিলরুবার কবিতা আবৃত্তি, শিশু ও তরুণদের নৃত্য পরিবেশনা পুরো আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। ভাঙ্গুড়া থেকে আগত এথনিক কমিউনিটির প্রতিনিধি বাবু জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুরারি জানান, তাঁদের এলাকাতেও SALT প্রয়োগের ফলে মানুষের অধিকারবোধ ও সচেতনতা বেড়েছে।
এই নলেজ ফেয়ার ছিল আসলে মানুষের পরিবর্তনের মেলা, চিন্তাধারার রূপান্তরের মেলা। এখানে শেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে, একে অপরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কমিউনিটির জবা দলের অবহেলিত মুরব্বিদের সেবার গল্প সবার হৃদয় নাড়া দেয়।
এই পুরো আয়োজনের অংশ হতে পেরে আমি গভীরভাবে গর্বিত। এটি ছিল মানুষের গল্প, পরিবর্তনের গল্প এবং আশার গল্পে ভরা এক অসাধারণ দিন—যা দীর্ঘদিন মনে থেকে যাবে।
নলেজ ফেয়ারের প্রভাব
এই নলেজ ফেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল—একটি কমিউনিটির পরিবর্তনের গল্প অন্য কমিউনিটির মানুষ সরাসরি জানতে পেরেছেন। এতে করে এক দলের পরিবর্তন অন্য দলের জন্য অনুপ্রেরণায় রূপ নিয়েছে। কমিউনিটির মানুষ বুঝতে পেরেছেন, তাদের ছোট ছোট উদ্যোগও বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে। ফলে অনেকের মধ্যেই কাজের আগ্রহ ও দায়িত্ববোধ আগের তুলনায় বেড়েছে।
এ ছাড়া কোহর্টের অন্যান্য পার্টনাররাও তাদের নিজ নিজ কমিউনিটির পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরেছেন। এসব গল্প আমাদের কমিউনিটির মানুষকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে এবং অনুপ্রাণিত করেছে। তারা বুঝতে পেরেছেন—তাদের মতো আরও অনেক কমিউনিটি আছে, যারা নীরবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে পরিবর্তনের পেছনে কাজ করে যাচ্ছে।
এই নলেজ ফেয়ারের মাধ্যমে কমিউনিটির মানুষ ও লিডাররা নিজেদের এলাকার ভেতরে কী কী পরিবর্তন হচ্ছে, কারা কীভাবে কাজ করছে—তা আরও পরিষ্কারভাবে জানতে পেরেছেন। এর ফলে কমিউনিটি লিডার ও সাধারণ মানুষের মধ্যকার সম্পর্কেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আগে অনেকেই লিডারদের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করতেন; এখন সেই ভয় অনেকটাই কেটে গেছে।
বর্তমানে প্রায়ই দেখা যায়, কমিউনিটি লিডার ও সাধারণ মানুষ একসঙ্গে বসে নিজেদের এলাকার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করছেন, তরুণদের উৎসাহ দিচ্ছেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছেন। এই পারস্পরিক বোঝাপড়া, বিশ্বাস ও বন্ধনই নলেজ ফেয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
Comment
Thank You Vai.
মানুষের গল্প, পরিবর্তনের গল্প আর আশার গল্প—সব মিলিয়ে এক গভীর মানবিক অভিজ্ঞতা। এর অংশ হতে পারা সত্যিই গর্বের।
© 2025 Created by Rituu B. Nanda.
Powered by
You need to be a member of Community life competence to add comments!
Join Community life competence