একটি ভুল সিদ্ধান্ত, একটি জীবনের লড়াই: আসমানী আপার আত্মকথা

[Hasina Khatun]

একটি ভুল সিদ্ধান্ত, একটি জীবনের লড়াই: আসমানী আপার আত্মকথা

পেঁচাকোলা কমিউনিটিতে ১৬ ডেইস উপলক্ষে মানবাধিকার দিবস উদযাপনের দিনে একটি আলোচনা সভা ছিল। সেদিন অনেকের ভিড়ের মাঝেই কাঁপা কণ্ঠে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্তের গল্প শোনান পেঁচাকোলা কমিউনিটি কৃষ্ণচূড়া গ্রুপের সদস্য আসমানী আপা। কথাগুলো বলতে গিয়ে বারবার তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। এই কথাগুলো তিনি আগে কখনো কাউকে বলতে পারেননি। সল্টের অনুপ্রেরণায় সাহস সঞ্চয় করে সেদিন তিনি নিজের জীবনের কষ্টগুলো সবার সামনে তুলে ধরেন—যাতে আর কোনো মা এমন ভুল সিদ্ধান্ত না নেন।

আসমানী আপার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটি যখন ক্লাস টেনে পড়ে, তখনই সমাজের চাপ আর চারপাশের প্রলোভনে পড়ে তিনি মেয়ের বাল্যবিয়ে দিয়ে দেন। মেয়েটি ছিল খুব সুন্দরী, তাই বিয়ের প্রস্তাবের অভাব ছিল না। অথচ আসমানী আপার মনে ছিল অন্য স্বপ্ন—তিনি চেয়েছিলেন তার মেয়েকে অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে। মেয়েরও স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু এক নিমিষেই সেই স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যায় একটি ভুল সিদ্ধান্তে।

বিয়ের সময় সাধ্যের বাইরে গিয়ে কিছু উপহার আর টাকা-পয়সা দেন আসমানী আপা। শুরুতে মেয়েটির শ্বশুরবাড়ি ও স্বামীর ব্যবহার ভালোই ছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতেই শুরু হয় পারিবারিক নির্যাতন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন অপমান করে বলে—
“তোমার বাবা ভ্যান চালক, আমরা তোমাকে আর রাখবো না। থাকতে চাইলে বাবার বাড়ি থেকে অনেক টাকা যৌতুক আনতে হবে।”

এই কথাগুলো বলতে গিয়ে সভায় আসমানী আপা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেই অপমান, সেই অসহায়ত্ব আজও তাকে তাড়া করে ফেরে।

শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অল্প বয়সে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কারণে মেয়েটি মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ে। তখন একজন মায়ের মতো করেই আসমানী আপা শক্ত হাতে মেয়ের পাশে দাঁড়ান। তিনি বলেন,
“মা, আমি আছি। আমি তোমাকে আবার স্কুলে ভর্তি করাবো। তুমি আবার পড়াশোনা করবে।”

মেয়েকে আবার স্কুলে ভর্তি করানো হয়। কষ্টের মাঝেও মেয়েটি এসএসসি পাস করে। এরই মধ্যে ডিভোর্স না হলেও শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে আসে আরেকটি নতুন চক্রান্ত। তারা জানায়—তাদের ছেলে দেশের বাইরে যাবে, মালয়েশিয়া। মেয়েকে নিতে চাইলে আবার টাকা দিতে হবে।

সরল মনে আসমানী আপা রাজি হয়ে যান। মেয়েটিও বলে,
“মা, বাঙালি মেয়ের জীবনে বিয়ে একটাই। আমি আবার শ্বশুরবাড়িতে যেতে চাই।”

এই আশায় আবার মেয়েকে পাঠানো হয়। কিন্তু মালয়েশিয়ায় কাজ ঠিকমতো না পেয়ে চার মাসের মাথায় জামাই ফিরে আসে বাংলাদেশে। এরপর আবার শুরু হয় অবহেলা ও সহিংসতা। শেষ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়ে মেয়েটি আবার বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। আবার থেমে যায় তার পড়াশোনা।

কয়েক মাস পর জামাই এসে জানায়—সে মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকবে। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আবার আসমানী আপা মেয়েকে তার স্বামীর হাতে তুলে দেন। এখন তারা কষ্টের মাঝেই সংসার করছে, কারণ জামাইয়ের আয় খুবই স্বল্প।

এই গল্প বলতে গিয়ে আসমানী আপা সভায় বলেন,
“আমি যেরকম ভুল করেছি, এমন ভুল আর কেউ করবেন না। সল্ট থেকে আমি বুঝতে পেরেছি—মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া কতটা জরুরি। জীবনে যাই হোক না কেন, নিজের চেষ্টায় নিজেকে ক্ষমতায়িত করতে হবে।”

আসমানী আপার গল্প শুধু একজন মায়ের আত্মকথা নয়—এটি আমাদের সমাজের হাজারো কন্যাশিশুর নীরব কান্নার প্রতিচ্ছবি। বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও পারিবারিক সহিংসতা কীভাবে একটি মেয়ের স্বপ্ন, শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেয়—এই গল্প তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

মানবাধিকার দিবসের আলোচনায় আসমানী আপার এই সাহসী স্বীকারোক্তি আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়। মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরশীলতা নিশ্চিত করাই পারে এমন গল্পের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে।

কারণ একটি ভুল সিদ্ধান্ত শুধু একটি জীবন নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রভাবিত করে।

A wrong decision, a life's struggle: Asmani Apa's autobiography

On the day of the 16th Human Rights Day celebration in the Penchakola community, there was a discussion meeting. That day, in the midst of a crowd of many, Asmani Apa, a member of the Krishnachura group of the Penchakola community, told the story of the biggest wrong decision of her life with a trembling voice. She repeatedly broke down in tears while saying these words. She had never been able to say these words to anyone before. Gathering courage with the inspiration of Salt, she brought the hardships of her life to everyone that day—so that no other mother would make such a wrong decision.

Asmani Apa has two sons and a daughter. When the girl failed her class, she succumbed to the pressure of society and the temptations of her surroundings and got her daughter married off as a child. The girl was very beautiful, so there was no shortage of marriage proposals. However, Asmani Apa had another dream in mind—she wanted her daughter to study far and wide. Her daughter also dreamed of becoming an engineer. But in an instant, those dreams were shattered by a wrong decision.

At the time of the wedding, Asmani Apa gave some gifts and money beyond her means. Initially, the girl's in-laws and husband treated her well. But after a while, family abuse began. The in-laws insulted her and said, "Your father is a van driver, we will not keep you anymore. If you want to stay, you will have to bring a lot of money as dowry from your father's house."

Saying these words, Asmani Apa broke down in tears at the meeting. That humiliation, that helplessness still haunts her today.

Finally, the girl was sent to her father's house. Due to such a terrible experience at a young age, the girl broke down mentally and physically. Then, like a mother, Asmani Apa stood by her daughter with a strong hand. She said,
"Mother, I am here. I will get you admitted to school again. You will study again."

The girl was admitted to school again. Despite the hardships, the girl passed her SSC. Even though the divorce was not done yet, another new plot came from the in-laws. They said that their son would go abroad to Malaysia. If he wanted to take the daughter, he would have to pay money again.

Asmani Apa agreed with a simple mind. The girl also said,
“Mom, a Bengali girl only gets married once in her life. I want to go back to my in-laws.”

With this hope, the daughter was sent back. But after four months of not getting a proper job in Malaysia, the son-in-law returned to Bangladesh. Then the neglect and violence started again. Finally, the girl returned to her father’s house after being tortured. Her education stopped again.

After a few months, the son-in-law came and said that he would be separated from the daughter. Thinking about the future of the daughter, Asmani Apa again handed over the daughter to her husband. Now they are living a difficult life, because the son-in-law’s income is very low.

While telling this story, Asmani Apa said in the meeting,
“No one else will make the same mistake I made. From SALT, I have understood how important it is for girls to be self-reliant. No matter what happens in life, you have to empower yourself through your own efforts.”

Asmani Apa’s story is not just a mother’s autobiography—it is a reflection of the silent cries of thousands of girls in our society. This story is a shining example of how child marriage, dowry, and domestic violence destroy a girl’s dreams, education, and future.

This courageous confession by Asmani Apa in the discussion on Human Rights Day teaches us to think anew. Investing in girls’ education, raising awareness, and ensuring self-reliance can prevent such stories from repeating.

Because a wrong decision affects not just one life, but generations after generations.

[Rituu B. Nanda]

Please can you share how this is related to SALT?

And what do you mean by raising awareness.

Thanks Khadija.

[Sadia Jafrin]

মেয়েদের যে অনেক শক্তি এটাই মেয়েদের নিজেদের অনুধাবন করতে হবে। খুব ভালো লিখেছেন।